প্রধান শিক্ষকের বাণী
তথ্য ও যোগাযোগের প্রযুক্তি (Information and Communication Technology-ICT) মানুষের জীবন ধারণের পদ্ধতিকে বদলে দিয়েছে- জীবনকে করেছে সহজ ও আনন্দময়। শিক্ষাক্ষেত্রেও তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি যোগ করেছে নতুন মাত্রা। আইসিটি স্থান করে নিয়েছে গ্রামের বিদ্যালয়ের সেই ছোট্ট শ্রেণিকক্ষেও - যেখানে শিক্ষার্থীরা বই-খাতার পাশাপাশি কম্পিউটারেও শিখতে শুরু করেছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল বাংলাদেশের যোগ্য রূপকার হিসাবে গড়ে তোলে ‘‘ভিশন ২০২১’’ বাস্তবায়নের জন্য এই ওয়েবসাইট অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মূলত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক এই তিন অনুসঙ্গের নিকট তথ্য, উপাত্ত সহজে ও দ্রুততার সহিত পৌঁছানো এবং তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর এবং অন্যান্য সরকারি অফিসের যোগাযোগ রক্ষা করা এই ওয়েবসাইটের লক্ষ্য। দিনাজপুর জেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর ইতোমধ্যে সকল শিক্ষকদের নিয়ে ‘‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’’ বিষয়ক অভ্যন্তরিন প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেছে। এই ওয়েবসাইটটি খোলার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান উন্নয়ন ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করণে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে এই প্রত্যাশা করছি।
রওশন আরা বেগম
প্রধান শিক্ষক (ভারঃ)
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর
স্কুল ইতিহাস
মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হল শিক্ষা । শিক্ষার প্রথম এবং প্রধান কাজ হল পরিবেশের সাথে শিক্ষার্থীর সংগতি বিধান করা । শিক্ষা অর্জনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিদ্যালয়ের কোন বিকল্প নেই । তাই দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সে ভূমিকা নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে । উত্তরাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশে যে কয়টি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম ।
সু-প্রসিদ্ধ কাটারী ভোগ চাল আরত রসাল লিচুর জেলা দিনাজপুর । সেই জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পুনর্ভবা নদী । এই নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার পুর্বে সমান্তরাল ভাবে বহমান ছিল গর্ভেশ্বরী নদী । কালের বিবর্তনে যা আজ মরা নদীর রূপ নিয়েছে । এই দুই নদীর মাঝখানে গড়ে উঠেছিল একটি বন্দর নগরী । এই বন্দর নগরীর আধুনিক রূপ আজকের দিনাজপুর শহর । আর এই শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এক মনোরম পরিবেশে এই বিদ্যালয়টি অবস্থিত ।
দেশের উত্তরাঞ্চলকে বলা হয়ে থাকে অবহেলিত জনপদ । কিন্তু অতীতের দিনাজপুর ছিল একটি সমৃদ্ধ বন্দর । তাই শস্য, সৌন্দর্য, শিল্প ও ঐশ্বর্যে ভরপুর দিনাজপুর ছিল একটি উন্নত জনপদ । তৎকালীন দিনাজপুর জেলার প্রাচীন শিল্লহা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল, তাদের মধ্যে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল অন্যতম । নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই বিদ্যালয়টি শুরু থেকে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে । ১৮৫৪ সালের দ্রুত শিক্ষা বিতরণ নীতির অনুদান প্রাপ্ত আঠারটি বালিকা বিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিদ্যালয়টি অধিভূক্ত ছিল । তৎকালীন জেলা কালেক্টরের পত্নী মিসেস রেডেনশ এর ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগের সাথে মহারাজা জগদীশ নাথের আর্থিক সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় । এই অঞ্চলের মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে আলোক বর্তিকা হস্তে শিক্ষার আলো সমাজে বিকিরণ করেছেন । বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে একটি ইংরেজি মাধ্যমের উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয় । অতঃপর ১৯৬১ সালে জাতীয় করণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নাম “দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ।”
১৮৬৯ সালে যখন এই শিখা প্রতিষ্ঠানটি প্রথম চালু হয় তখন এটি ১ম শ্রেণী হতে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ছিল । পরে প্রতিষ্ঠানটিকে পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয় । তৎকালে এই প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ব্যতীত সকল বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠ দান করা হত ।
এটি প্রতিষ্ঠার ৯২ বছর পরে ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিল এটি জাতীয় করণ (প্রাদেশিকীকরণ) করা হয় । ১৯৪৮-৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পাঠদান করা হত । ১৯৫২ সালের পুর্ব পর্যন্ত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হত । কিন্তু ১৯৫২ সালের পর “ইস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারী এডুকেশন বোর্ড” ঢাকায় স্থাপিত হওয়ায় এই মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা উক্ত বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে থাকে । পরবর্তীতে রাজশাহীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড স্থাপিত হলে বিদ্যালয়টি রাজশাহী বোর্ডের অধীভূক্ত হয় এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এস.এস.সি. পরীক্ষা রাজশাহী বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় । অতঃপর ২০০৯ সাল থেকে অত্র বিদ্যালয়ের এস.এস.সি. পরীক্ষা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর এর অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ।
পরিকল্পনায় : চন্দ্র শেখর ভট্টাচার্য (প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক)
গ্রন্থনায় : কৃষ্ণ কান্ত রায় (সহকারি শিক্ষক)
তথ্য : মিতা জাহান (সহকারি শিক্ষক)